{ আমরা মুসলমান। একজন মানব হিসেবে এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড়ো পরিচয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এইযে-আমরা মুসলমান হয়েও আমাদের ধর্মীয় শিক্ষার এতটাই
অভাব:আমরা আমাদের মূর্খতা, আবেগ ও সংস্কৃতি পালনের নামে এমন কিছু করে
বসি,যা শরীয়তের কোনো অংশ নয়। এতদ্বসত্তেও আমরা তা নির্বিগ্ন চিত্তে পালন
করি। এবং মূর্খতার দ্বরুন সেটাকেই আমরা শরীয়তের কোনো অংশ বলে মনে করি,বা
সেটাকে ভাল কাজ মনে করি। এমন কিছু কুসংস্কার,প্রচলিত ভুল,বা মানুষের মনগড়া মতবাদ নিয়ে আমার এই পোষ্ট লেখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক।আমীন! }
অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কথা চলছে এমন সময় সে উপস্তিত হলে অনেককে বলতে শোনা যায় যে, তুমি লম্বা হায়াত পাবে, আমরা তো তোমার কথাই আলোচনা করছিলাম!
এই ধরনের কথা এত বেশি প্রচলিত যে, শুনে মনে হতে পারে, তা একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। কিন্তুসামান্যচিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, এরসাথে হায়াত বাড়া-কমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনবিশ্বাস। শরীয়তে যেমন এর কোনো ভিত্তি নেই তেমনি বিবেক-বুদ্ধিও এই ধরনেরঅলীক ধারণা সমর্থন করে না। অতএব এ ধরনের বিশ্বাস পোষণ করা থেকে বিরত থাকাউচিত।
পায়ে ময়লা বা ধুলা-বালি লাগলে তাপরিষ্কার করা যায়, কিন্তু বিনা প্রয়োজনে পা ধোয়ানোর আয়োজন সমর্থনযোগ্য নয়। উপরন্তুএতে রয়েছে নববধুর প্রতি এক ধরনের মানসিক পীড়ন, যা একজন সচেতন নারী সহজেইউপলব্ধি করতে পারেন। আর কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া, সে পুরুষ হোক বানারী, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। সাধারণ কোনো অতিথির সাথেও এমন আচরণ করাহলে নিঃসন্দেহে তিনি অপমানবোধ করবেন। তাহলে বাড়ির বধু হিসেবে যাকে গ্রহণকরা হচ্ছে তার সাথে এই আচরণের কী অর্থ?!
কোনো মানুষকে শুধু শুধু অশূচি ও অপবিত্র মনে করার ধারণা হিন্দু-সংস্কৃতির অংশ।কিন্তুইসলাম মানব ও মানবতাকে অনেক উঁচু মর্যাদা দিয়েছে। সত্ত্বাগতভাবে কোনোমুমিনকে অশুচি ও অপবিত্র মনে করার সুযোগ ইসলামে নেই। অতএব কোনো কুসংস্কারবা ভ্রান্ত বিশ্বাসের শিকার হয়ে নববধুর পা ধোয়ার আয়োজনও ইসলাম সমর্থনকরে না। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ির এমন কোনো আলাদা মর্যাদা বা বৈশিষ্ট্য নেই যে, সেখানে প্রবেশ করতে হলে পাধুয়েই প্রবেশ করতে হবে।
ইসলামেরপরিচ্ছন্ন আকীদায় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের উচিত এই জাতীয় কু রসমপরিত্যাগ করা।
বাস্তবেএটি একটি ভিত্তিহীন কথা। হাত বা হাতের তালু চুলকানোর সাথে টাকা-পয়সাআসা-যাওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই। অতএব এই ধরনের অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথাপরিহার করা উচিত।
প্রচলিত ভুল {ছয়}
অনেকসময় সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির দিকে লক্ষ্য করে কিংবা কোনো বাস্তবতাবোঝানো কঠিন মনে হলে অনেকে চুপ থাকার পথ বেছে নেন। অথবা দু’একবার বলে চুপ হয়ে যান। এটা এ কারণে অনুচিত যে, এতে প্রকৃত বিষয় মানুষের অজানা থেকে যাবে এবং ভুল কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
ঈদ ইসলামের শাখাগত বিষয় নয়। এটি দ্বীনের ‘শিআর’ তথা প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত এবং এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের নির্ধারণ ও নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল
(أمر تعبدي وتوقيفي )।অর্থাৎ এটি শুধু বিবেকবুদ্ধি ও কিয়াস দ্বারা অনুধাবন করা যায় না। সরাসরিশরীয়তদাতার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আদেশ দ্বারাই বিধিত হয়। এজন্য সুন্নতেমুতাওয়ারাসা, স্পষ্ট হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে তৃতীয় ঈদ আবিষ্কারকরা বিদআতই হবে।
আরএখন তো বিষয়টি শুধু এই নয় যে, একটি বিদআতকে সুন্নতের চেয়েও বেশিগুরুত্বপূর্ণ মনে করে সম্মিলিতভাবে উদযাপন করা হচ্ছে; বরং এটিকে বানানোহয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববতের মাপকাঠি ওপ্রতীক। অথচ শরীয়ত বলে সুন্নাহর অনুসরণ, উসওয়ায়ে হাসানাহ অনুযায়ীজীবনযাপন, সুন্নতকে যিন্দা করা ও বিদআত নির্মূল করার মেহনত হচ্ছে মুহববতেরমাপকাঠি ও নিদর্শন।
সাদাচোখে এটি কারো কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও বাস্তবে তা একটি মারাত্মক চিন্তাগত বিকৃতি। আর এই নবআবিষ্কৃত ‘ঈদ’কে জশনে জুলুস আকারে পালন করতে গিয়ে যেসব গর্হিত কাজ, আচরণ ও ভিত্তিহীন বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয় সে বিষয় তো রইলই।
মনেরাখা উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হকসমূহ আদায় করাথেকে উদাসীন হয়ে অন্যায় পন্থায় হক আদায়ের বাহানার দ্বারা নিজেকেসান্ত্বনা দেওয়া নিজের প্রতি ও গোটা উম্মতের প্রতি মারাত্মক জুলুম। আল্লাহতাআলার নিকট দাবি নয়, আমল গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, অন্তরেরতাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। বিদআত নয়, শুধু সুন্নতই তাঁর নিকট বরণীয়।
একটু ভেবে দেখুন, যে নাসারাদের পথ থেকে আমরা সূরায়ে ফাতিহায় প্রতিদিন কমপক্ষে বিশবার আল্লাহ তাআলার নিকটولا الضالين বলে আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের থেকে নেওয়া রসম-রেওয়াজে কি উম্মতের কোনো কল্যাণ থাকতে পারে?
اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين
গত সংখ্যার প্রচলিতভুলবিভাগে অনাবৃষ্টির দিনে বৃষ্টির অবতরণ কামনা করে প্রচলিতএকটিকু-সংস্কারের কথা লিখেছিলাম। সেদিন একজন লেখকেরএকটিলেখায়আরেকটি নতুন রসমের কথা পড়লাম। তবে তা বৃষ্টি অবতরণের জন্য নয়; বৃষ্টিবন্ধের জন্য। তিনি লিখেছেন , ‘বৃষ্টিপাত প্রবল থেকে প্রবলতর হয়, ... কেউকেউ ব্যাকুল হয়ে ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করে আযান দেওয়ার জন্য, যিনি বৃষ্টিদেন সেই আল্লাহ আযান শুনে হয়তবা অনুভব করবেন তাঁর বান্দার অসহায়ত্ব, রহমতকরবেন এবং ফিরিয়ে নেবেন বজ্র, বৃষ্টি, বাতাস।’ জানি না, বজ্র-বৃষ্টি ও ঝড়োবাতাসের সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ‘আযান দেওয়ার’ এই আমল
লেখকেরস্রেফ কল্পনা না বাস্তবেও কোনো এলাকায় এর প্রচলন রয়েছে। হয়তো বা দুর্ভোগথেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার চিন্তা থেকেই এই নতুন আমল।এখানে উল্লেখ্য, সুদিনে আল্লাহর শোকর আদায় করা, দুর্দিনে সবর করা এবং তাঁরদেয়া আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করা অবশ্যইপ্রশংসনীয়। তবে এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, এই শোকর, সবর ও আশ্রয় প্রার্থনারক্ষেত্রে একজন মুমিনকে প্রথমত ঐ আমলগুলিই করা উচিত, যা নবীজী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিদু’টোই বান্দার কষ্টের কারণ। এ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতেহবে। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার সুন্দর নিয়ম যেমন ইসলামেরয়েছে তেমনি অতি বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়ারসুন্দর শিক্ষাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকেদিয়েছেন। একজন মুমিনকে তাঁর শিক্ষা দেওয়া আমলের মাধ্যমেই আল্লাহর আশ্রয়কামনা করা উচিত। সহীহ হাদীসে এসেছে, একবার মদীনায় এক সপ্তাহ একাধারে প্রবলবৃষ্টিপাত হল। অবিরাম বৃষ্টির সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহাবীগণ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর দরবারে দুআ করার জন্য অনুরোধকরেন। তখন নবীজী এভাবে দুআ করেন, اللهم حوالينا ولا علينا، الله على الآكام والظراب وبطون الأودية و منابت الأشجارনবীজীর দুআর ফলে মুহূর্তেমদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০১৪ এমনিভাবেঝড়-তুফানের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন, اللهم اني اسئلك خير ما آمرت به وأوعوذبك من شر ما آمرت بهআর বাতাস কমে বৃষ্টিনেমে এলে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল দেখাত। তখন তিনি আল্লাহর ‘হামদ’ করতেন, বলতেন, এটি ‘রহমত’। আরও বলতেন, اللهم صيبا نافعا -ফাতহুল বারী ২/৬০৪, ৬০৮অতএব হাদীসে বর্ণিত এসব দুআ, এছাড়া অন্যান্য দুআ-ইস্তিগফার বা ‘সালাতুলহাজত’ পড়ে আল্লাহর কাছে এ সকল বালা-মুসিবত থেকে পানাহ চাওয়া উচিত। কিন্তুআযান তো ইসলামের অন্যতম শিআর। যার জায়গা ও ক্ষেত্রগুলো শরীয়ত কর্তৃকসুনির্ধারিত। তাই সেই নির্ধারিত জায়গাতেই এই আমল সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
المسجدبيتاللهوالمدرسةبيتي
‘মসজিদ আল্লাহর ঘর আর মাদরাসা আমার ঘর।’
এখানে লক্ষণীয় যে, উপরোক্ত কথায় দু’টি বাক্য রয়েছে। প্রথম বাক্যটি হল, ‘মসজিদ আল্লাহর ঘর’। এটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত । প্রায় এর কাছাকাছি শব্দ বিভিন্ন হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তুদ্বিতীয় বাক্য অর্থাৎ‘মাদরাসা রাসূলের ঘর’ এটি কোনো হাদীস নয়। কেউ এটাকে হাদীস হিসেবে বললে ঠিক হবে না। তবে একথা বলাই বাহুল্য যে, ‘মাদরাসা’ যেখানে দ্বীনি তালীম-তরবিয়ত হয়, কুরআন-হাদীসের শিক্ষা দেওয়া হয়, আল্লাহ ও রাসূলের কথাআলোচনাহয়তা নিঃসন্দেহে মুবারক স্থান। এ সকল স্থান ফেরেশতারা ঘিরে রাখেন এবং সেখানেআল্লাহর রহমত ও সাকীনা নাযিল হয়। অতএব ঐসব ঘরও আল্লাহ ও রাসূলেরই ঘর। কিন' তাই বলে‘মাদরাসা রাসূলের ঘর’ বাক্যটিকেহাদীস হিসেবে বলার সুযোগ নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। আর মসজিদ-মাদরাসার মধ্যেএভাবে বিভাজনও অনুচিত।
কোনোকাজ করার ইরাদা করলে কিংবা অত্যাসন্ন কোনো বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনাকরতে তাঁরই দরবারে কায়মনোবাক্যে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রার্থনা করার নামইস্তেখারা। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাকরে যে, আমি যা করতে চাই তাতে যদি আমার কল্যাণ থাকে তাহলে তা আমার জন্য সহজকরে দিন এবং বরকত দান করুন। আর যদি তাতে কল্যাণ না থাকে তাহলে তা থেকেআমাকে বিরত রাখুন এবং যাতে আমার কল্যাণ তা-ই আমাকে দান করুন।এটিই হল ইস্তেখারার হাকীকত। ইস্তেখারার জন্য দুটি কাজ করণীয় বলে সহীহহাদীসেবলা হয়েছে। দু’ রাকাত নামায আদায় করা এবং ইস্তেখারার প্রসিদ্ধ মাসনূনদুআটি মনোযোগের সাথে পড়া। সময়ের স্বল্পতা বা অন্য কোনো কারণে এই দু’টি কাজসম্ভব না হলে তিনবার বা সাতবার এই দুআ পড়েও ইস্তেখারা করা যায়, اللهم خر لي واخترلي (ইবনুস সুন্নী, হাদীস : ৫৯৭, ৫৯৮) অতঃপর যে দিকে কলবের ইতমিনান হবে আল্লাহর উপর ভরসা করে সেই কাজআরম্ভ করবে। এভাবে আমল করলে ইস্তেখারা হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, এই আমল করারজন্য শরীয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। রাত বা দিনের যেকোনো সময় তা করা যায়।কিন্তু অনেকে মনে করে, ইস্তেখারার জন্য ঘুমাতে হয় কিংবা রাত্রি বেলায়ঘুমানোর আগেই শুধু ইস্তেখারা করা যায়। আবার অনেকে মনে করে, স্বপ্ন দেখলেইইস্তেখারা পূর্ণ হবে। আসলে এর কোনোটিই ইস্তেখারার জরুরি কোনো বিষয় নয়; বরংরাত-দিনের যে সময় নামায পড়া যায় তখনই দুই রাকাত নামায ও নির্দিষ্ট দুআটিপড়ে ইস্তেখারা করে নেওয়া যায়।
প্রচলিত ভুল {বার}
অযিফারঅনির্ভরযোগ্য কোনো কোনো পুস্তিকায় বা পৃথক আকারে প্রকাশিত লিফলেটে দরূদেহাজারী নামের একটি দরূদ কোনো কোনো হলকায় প্রচার করা হয়। এই দরূদ কোনোসহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়নি এবং তা কোনো আল্লাহওয়ালা বুযুর্গেরও রচিত দরূদনয়। এতে না আছে দরূদের নূর, না আছে সাহিত্যের মাধুর্য। বরং এর ভাষায়রয়েছে অসৌজন্যতা। তাই এই দরূদ পাঠ থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর এটিকেকুরআন-হাদীসের মাছুর দরূদ মনে করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
প্রচলিত ভুল {চৌদ্দ}
কুরবানীর শরীক সংখ্যা কি বেজোড় হওয়া জরুরি?
কিছুলোককে বলতে শোনা গেছে, যে পশুতে সাতজন শরীক হতে পারে তাতে শরীকের সংখ্যাবেজোড় হওয়া জরুরি। সুতরাং একটি গরুতে এক, তিন, পাঁচ বা সাতজন শরীক হতেপারবে। দুই, চার বা ছয়জন শরীক হতে পারবে না।
এটাবিলকুল গলত কথা। একটি গরু যেমন এক ব্যক্তি একা কুরবানী করতে পারে তেমনিদুই থেকে সাত পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যক শরীক একত্র হয়েও কুরবানী করতে পারে।এতে কোনো বাধা নেই। তেমনি শরীকের সংখ্যা জোড় না হয়ে বেজোড় হওয়ার মাঝেওএমন আলাদা কোনো ফযীলত নেই, যার কারণে পাঁচ শরীকের স্থলে ছয় শরীক বা ছয়শরীকের স্থলে সাত শরীক একত্র হয়ে কুরবানী করতে উৎসাহ দেওয়া যায়।
এই রেওয়ায়েতটি কোথায় পড়েছেন বা কার কাছে শোনেছেন-জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ কেউএকটিকিতাবেরকথা বলেছেন। বললাম, সেখানে কি এর কোনো হাওয়ালা আছে? তারা দেখে বললেন, মুসনাদে আহমদের হাওয়ালা দেওয়া হয়েছে। মূল কিতাব খুলে দেখা গেল, সেখানেএই বিষয়টিকে হাদীস হিসেবে উল্লেখই করা হয়নি। বরং ‘আশিআতুল লামাআত’ (মিশকাতের ফার্সী শরহ)-এর উদ্ধৃতিতে ইমাম আহমদের বরাতে এই উক্তি উল্লেখকরা হয়েছে যে, কয়েকটি কারণে জুমআর রাত কদরের রাত থেকেও উত্তম। কেননাজুমআর রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আমিনার গর্ভেআগমন করেন।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কোথাকার বিষয় কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। ইমাম আহমদের নাম দেখেই মুসনাদে আহমদের উদ্ধৃতি অবতারণা করা হয়েছে। আবারএকটিউক্তিকেহাদীস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে!! অথচ এ বিষয়টিও তাহকীক করা প্রয়োজন ছিলযে, ইমাম আহমদ থেকে কথাটি প্রমাণিত কি না? আর এ রাতেই রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে আগমন করেছিলেন-এ কথারও সনদখোঁজার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া এটি প্রমাণিত হলেও এটা কীভাবে আবশ্যক হয় যে, এ কারণে রাতটি কদরের রাত থেকে উত্তম? ‘আশিআআতুল লামাআত’ গ্রন্থে এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই, অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবেও নেই।
সারকথা এই যে, উপরোক্ত উক্তিটি হাদীস নয় এবং এটি অন্য কোনো দলিল দ্বারাও প্রমাণিত নয়।
উপরেরঘটনা থেকে এই বাস্তবতা আবারো ফুটে উঠল যে, শুধু অনুবাদসর্বস্ব জ্ঞান খুবইভয়ঙ্কর। যারা শুধু অনুবাদের উপর নির্ভর করে কোনো আরবী কিতাবের জ্ঞান লাভকরেন, মূল কিতাব থেকে সরাসরি জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও আবশ্যকীয়ইলম যাদের নেই-তারা অনুবাদের সহায়তায় যতটুকু অর্জন করেন তা ঝুঁকিপূর্ণ। এপন্থায় অর্জিত জ্ঞান যেমন তাদেরকে গবেষণার যোগ্য প্রমাণ করে না তেমনিএটাকে পুঁজি করে কোনো আহলে ইলমের সাথে ইলমী আলোচনা ও পর্যালোচনার অধিকারওসৃষ্টি হয় না।
হায়! আমাদের বন্ধুরা যদি এই বাস্তবতাটুকু অনুভব করতেন তাহলে সমাজের অনেক বিবাদ দূর হয়ে যেত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
১. মুসাফাহার সময় ঝুঁকা
সাক্ষাতের সময় নিজ মুসলিম ভাইকে সালাম করা তো সুন্নতে মুয়াক্কাদাহওইসলামের শিআর। আগে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা, পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া, শুদ্ধওপরিষ্কার উচ্চারণে সালাম বলা-কমপক্ষে ‘আসসালামু আলাইকুম’ পর্যন্ত অবশ্যই বলা-সুন্নত।
সালামেরপর আরেকটি আমল হল মুসাফাহা, যা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল। তবে সালামের মতোমুসাফাহার আদেশ এতটা তাকিদপূর্ণ নয় যে, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সাথেমুসাফাহা করতে হবে। আর আজকাল তো মুসাফাহার আদবের আলোচনাওকম হয় এবং এসবের প্রতি লক্ষ্যওকম করা হয়। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিলে এ বিষয়ে আলাদা প্রবন্ধ প্রকাশের ইচ্ছা আছে।
মুসাফাহার আদব রক্ষা না করার কারণে অনেক সময় মানুষের কষ্ট হয়। এটা নাজায়েয।
এইমুহূর্তে যে রসম সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই তা এই যে, অনেককে দেখা যায়কোনো বুযুর্গ বা বড় ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করার সময় কিছুটা ঝুঁকে যান।অথচ কারো সম্মানার্থে মাথা বা ঘাড় ঝুঁকানোর অনুমতি নেই। ‘কোনো ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত হলে কি মুসাফাহা করব’-এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামইরশাদ করেন, হ্যাঁ, মুসাফাহা কর। এরপর জিজ্ঞাসা করা হল, তার সামনে কিঝুঁকতে পারি? ইরশাদ করলেন, না। ঝুঁকা যাবে না। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭০৩
২. মুসাফাহার পর বুকে হাত লাগানো
অনেক ভাইকে দেখা যায়, মুসাফাহার পর বিশেষ করে কোনো বুযুর্গের সাথে
মুসাফাহারপর ডান হাত নিজের বুকে মুছে নেন। কী নিয়তে এমনটি করেন-তা আমার জানানেই। সম্ভবত এই নিয়ত হতে পারে যে, মুসাফাহার দ্বারা যে বরকত হল তা নিজশরীরে মুছে নেওয়া।
এই প্রচলনের যেমন কোনো ভিত্তি নেই তেমনি এই নিয়তেরও। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা এজন্য জরুরি যে, ধীরে ধীরে তা রসম-রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। এ নিয়ে পরস্পর দ্বন্দ্বওসৃষ্টি হয়। এমনকি মূর্খতাপ্রসূত এই রেওয়াজ একপর্যায়েবিদআতপর্যন্ত পৌঁছে যায়। অন্যথায় কেউ যদি এমনিতেই বুকে নিজের হাত মুছে নেয় তাহলে এতে ক্ষতির কী আছে!
রবিউস সানীর এগার তারিখে অনেককে ফাতেহায়ে ইয়াজদহম (এগার তারিখের ফাতেহা) বা শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর ওফাত দিবসপালন করতে দেখা যায়। এ উপলক্ষে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয় এবং মাহফিল-মজলিসের আয়োজন করা হয়।
এটা একটা কু-রসম। ইসলামী শরীয়তে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসপালনের নিয়ম নেই। নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাঁদের কারোরই জন্মদিবস-মৃত্যুদিবসপালন করার কথা শরীয়তে নেই। তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবসপালন করতে হলে তো বছরের প্রতিদিনইপালন করতে হবে। অথচ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম তো সকল ওলি-বুযুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের জন্মদিবসপালন করেননি বা অনুসারীদেরকে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসপালনের আদেশ করেননি। পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে।
ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে তারিখে‘ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম’পালন করা হয় অর্থাৎ এগার রবিউস সানী তা ঐতিহাসিকভাবে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মৃত্যুদিবস হিসেবে প্রমাণিতও নয়।
কারণ তাঁর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
তাঁর জীবনীগ্রন্থ‘তাফরীহুল খাতির ফী মানাকিবিশ শায়খ আবদুল কাদির’-এএ সম্পর্কে কয়েকটি মত উল্লেখ করা হয়েছে : রবিউস সানীর নয় তারিখ, দশ তারিখ, সতের তারিখ, আঠার তারিখ, তের তারিখ, সাত তারিখ ও এগার তারিখ। আবার কারোকারো মতে রবিউল আউয়ালের দশ তারিখ। এই আটটি মত উল্লেখ করার পর গ্রন্থকার দশইরবিউস সানীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : ফাতাওয়া রহীমিয়া ২/৭৬-৭৭)
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা হাফেয যাহাবী রাহ. (৭৪৮ হি.)ও বলেছেন-
توفي في عاشر ربيع الآخر سنة إحدى وستين، وله تسعون سنة
‘তিনি নববই বছর বয়সে ৫৬১ হিজরীর রবিউস সানীর দশ তারিখে ইন্তেকাল করেন।’ (তারীখুল ইসলাম ২৯/৬০)
এছাড়া ইতিহাস ও আসমাউর রিজালের অন্যান্য কিতাবেও আট, নয় ও দশ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগার তারিখ নয়।
আর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও‘মৃত্যুদিবস’পালনকরা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়; বরং বছরের যেকোনো দিন নেককার বুযুর্গদেরজীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাঁদের জন্য ঈসালে ছওয়াব করা যায়। তা না করেনির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েয-নাজায়েয বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবসউৎযাপন করা রসম ও বিদআত ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ধরনের বিদআত ও রসমপালনেরমাধ্যমে খোদ শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মতো বুযুর্গ ওলিদের অবমাননাইকরা হয়। আর আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টিসহ বিদআতের অন্যান্য শাস্তি তোরয়েছেই।
এটাসম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সুরমা একটি খণিজ দ্রব্য। এর সাথে তুর পাহাড়ের কোনোসম্পর্ক নেই। মুসা আ.-এর আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা ও তুর পাহাড়ের মূল ঘটনাটিসত্য। কুরআন মজীদে এর পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। (সূরা আ‘রাফ : ১৪৩ দ্রষ্টব্য)কিন্তু কোথাও এই ঘটনার সাথে সুরমাকে জড়িয়ে দেওয়ার কথাটির সামান্যতমও উল্লেখ নেই। অতএব এই ধরনের কথা পরিহার করা জরুরি।
প্রচলিত ভুল {উনিশ}
নামাযে কয়েকটি ভুল
নামাযে মনে মনে কুরআন পড়া
যেসমস্ত নামাযে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সে সকল নামাযে অনেককে দেখা যায়, মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সূরা কেরাত পড়েন। হয়তো তারা এই ভুল ধারণা করেআছেন যে, আস্তে আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া।
এটিঠিক নয়। কারণ যে সকল নামাযে কেরাত আস্তে পড়তে বলা হয়েছে, তার অর্থ হল, নিচু স্বরে তিলাওয়াত করা। আর এতো খুবই সহজ কথা যে, মনে মনে পড়াকোনোক্রমেই নিচু স্বরে পড়া নয়।
ফিকহ-ফাতাওয়ারকিতাবাদি থেকেও বোঝা যায় যে, আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলএমনভাবে পড়া, যেন সে নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যইজরুরি যে, সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া দেখাযাবে। একটি হাদীসে আছে যে, যোহর ও আসর নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়েকেরামও কখনো কখনো শুনতে পেতেন। হযরত আবু মামার বলেন, আমরা হযরত খাববাবরা.কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ওআসর নামাযে কুরআন পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারাকীভাবে বুঝতেন? তিনি বললেন, ‘বিজতিরাবি লিহয়াতিহী’-তাঁর দাঁড়ি মোবারকনড়াচড়া দ্বারা। (সহীহ বুখারী-ফাতহুল বারী ২/২৮৪-২৮৭)
অতএবকেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবেহরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবেনা।
তাকবীরে তাহরীমা মনে মনে বলা
এটি আরেকটি ভুল। ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় এই ভুলটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। কান পর্যন্তহাতউঠিয়েবাঁধাকেই অনেকে যথেষ্ট মনে করে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, নামাযের শুরুতেতিনটি কাজ করতে হয়। প্রথমে মনে মনে কোন নামায পড়ছি-এর সংকল্প করতে হবে।এর নাম নিয়ত, যা নামায সহীহ হওয়ার জন্য জরুরি। উল্লেখ্য, মনে মনে সংকল্পকরে নিলেই নিয়ত হয়ে যাবে, মুখে উচ্চারণ করতে হবে না।
দ্বিতীয়কাজটি হল, তাকবীরে তাহরীমা। অর্থাৎ স্পষ্ট উচ্চারণে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।যেহেতু এই তাকবীরের মাধ্যমে নামায বহির্ভূত সকল কাজ হারাম হয়ে যায় তাইএকে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলে। এই তাকবীর বলা ফরয। যা স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণকরতে হবে।
তৃতীয় কাজ হল, কান পর্যন্ত দুইহাতউঠিয়ে ডানহাতদিয়ে বামহাতধরে নাভির নিচে বাঁধা। এই কাজটি সুন্নত।
প্রচলিত পরিভাষায় ‘নামাযের নিয়ত বাঁধা’ এই তিন আমলের সমষ্টিকেই বোঝায়।
এখন কেউ যদি শুধুহাতউঠিয়েতা বেঁধে নিল কিন্তু আল্লাহু আকবার বলল না বা মনে মনে বলল তাহলে নামাযেরপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবটিই আদায় হয়নি। ফলে তার নামায আদায় হবে না।
অতএব এখানেও তাকবীর স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করা অপরিহার্য। শুধু মনে মনে বলা যথেষ্ট নয়।
নিজের কষ্টার্জিত অর্থের উপর মানুষের মুহাব্বাত থাকা স্বাভাবিক।ইসলামে এই মায়া বা মুহাব্বত থাকা দোষণীয় কিছু নয়,কিন্তু উপরোক্ত ছোঁয়াছুয়ি ও কপালে ঠেকানোর মতো ভক্তিমূলক আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রথম উপার্জনকে ভক্তি জানালে পরবর্তী উপার্জনের পথ সুগম হবে-এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিওিহীন।
এসব আচরনের সবচেয়ে নিন্দিত দিক হল,উপার্জনের মাধ্যমকে অর্থাৎ গাড়ি, পণ্য বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে উপার্জনদাতা মনে করা।এমনকি কারো কারো কথাবার্তা থেকে তো পৌওলিকতারও আভাস পাওয়া যায়।
বাস্তব কথা এইযে, এই মাধ্যমগুলো উপলক্ষ মাত্র। তাই সবকিছু ঠিক থাকার পরও সবার উপার্জন ও সব সময়ের উপার্জন সমান হয়না। উপার্জন ও রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে।তিনি কখন কাকে কিভাবে রিজিক দিবেন এবং কোন উপায়ে দিবেন তা একমাত্র তিনিই জনেন।মনুষের কাজ হল হালাল উপার্জনের চেষ্টায় আল্লাহর দেওয়া মেধা ও শক্তি ব্যবহার করা এবং তাঁর কাছে রিজিক প্রার্থনা করা। অত:পর তিনি দয়া করে বান্দাকে যা কিছু দান করেন তার উপর সন্তষ্ট থাকা ও তাঁর শোকর গোযারী করা। সর্বোপরি এই অটল বিশ্বাস রাখা যে, উপার্জন আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। আর নেয়ামতের শোকর আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তা বাড়িয়ে দেন। উপার্জন হাতে আসার পর এটাই হল একজন মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু তা না করে উপার্জনের মাধ্যম এবং উপার্জিত অর্থ-কড়িকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাথায় ও কপালে ঠেকানো সম্পূর্ণ অর্থহীন ও বিদআতীমূলক আচরণ।এর সাথে যদি কোনো ভ্রান্ত বিশ্বাস যুক্ত হয় তাহলে তা যে একটি চরম গর্হিত কজে পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সুতরাং একজন মুসলমান হিসেবে এধরণের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ও অন্যকে একাজ থেকে বিরত রাখা ঈমানী দায়িত্বও বটে।সৌজন্যে: www.alkawsar.com
প্রচলিত ভুল{এক}
আলোচনা চলাকালে উপস্থিত হলে হায়াত দীর্ঘ হয়!
অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কথা চলছে এমন সময় সে উপস্তিত হলে অনেককে বলতে শোনা যায় যে, তুমি লম্বা হায়াত পাবে, আমরা তো তোমার কথাই আলোচনা করছিলাম!
এই ধরনের কথা এত বেশি প্রচলিত যে, শুনে মনে হতে পারে, তা একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। কিন্তুসামান্যচিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, এরসাথে হায়াত বাড়া-কমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনবিশ্বাস। শরীয়তে যেমন এর কোনো ভিত্তি নেই তেমনি বিবেক-বুদ্ধিও এই ধরনেরঅলীক ধারণা সমর্থন করে না। অতএব এ ধরনের বিশ্বাস পোষণ করা থেকে বিরত থাকাউচিত।
প্রচলিত ভুল {দুই}
শ্বশুর বাড়ি প্রবেশের আগে নববধুর পা ধোয়ানো
কোনো কোনো এলাকায় প্রথা আছে, শ্বশুরবাড়িতে প্রথম প্রবেশের সময় ঘরের বাইরে নববধুর পা ধোয়ার আয়োজন করা হয় এবং যারা তার পাধুয়েদেয় তাদেরকে বখশিশ দেওয়া হয়। মনে করা হয়, এই আচার পালন ছাড়া নববধুকে ঘরে তোলা অনুচিত। এটি একটি কু-রসম। ইসলামে যার কোনো ভিত্তি নেই।পায়ে ময়লা বা ধুলা-বালি লাগলে তাপরিষ্কার করা যায়, কিন্তু বিনা প্রয়োজনে পা ধোয়ানোর আয়োজন সমর্থনযোগ্য নয়। উপরন্তুএতে রয়েছে নববধুর প্রতি এক ধরনের মানসিক পীড়ন, যা একজন সচেতন নারী সহজেইউপলব্ধি করতে পারেন। আর কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া, সে পুরুষ হোক বানারী, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। সাধারণ কোনো অতিথির সাথেও এমন আচরণ করাহলে নিঃসন্দেহে তিনি অপমানবোধ করবেন। তাহলে বাড়ির বধু হিসেবে যাকে গ্রহণকরা হচ্ছে তার সাথে এই আচরণের কী অর্থ?!
কোনো মানুষকে শুধু শুধু অশূচি ও অপবিত্র মনে করার ধারণা হিন্দু-সংস্কৃতির অংশ।কিন্তুইসলাম মানব ও মানবতাকে অনেক উঁচু মর্যাদা দিয়েছে। সত্ত্বাগতভাবে কোনোমুমিনকে অশুচি ও অপবিত্র মনে করার সুযোগ ইসলামে নেই। অতএব কোনো কুসংস্কারবা ভ্রান্ত বিশ্বাসের শিকার হয়ে নববধুর পা ধোয়ার আয়োজনও ইসলাম সমর্থনকরে না। তাছাড়া শ্বশুরবাড়ির এমন কোনো আলাদা মর্যাদা বা বৈশিষ্ট্য নেই যে, সেখানে প্রবেশ করতে হলে পাধুয়েই প্রবেশ করতে হবে।
ইসলামেরপরিচ্ছন্ন আকীদায় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের উচিত এই জাতীয় কু রসমপরিত্যাগ করা।
প্রচলিত ভুল {তিন}
কবরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা কি নিষেধ?
অনেকে মনে করে, কবরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা ঠিক নয়। এতে নাকিআঙ্গুলপঁচে যায়। এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। জীবিত মানুষের দিকে যদি আঙ্গুল দিয়েইশারা করা যায় তাহলে কবরের দিকে ইশারা করলে দোষ হবে কেন? আর শরীয়তেরদৃষ্টিতেও এতে কোনো বাধা নেই। আর এই কারণে কারো আঙ্গুল পঁচে গেছে-এমন কোনোনজিরও নেই। অতএব এই ধরনের ভিত্তিহীন কথা বলা ও বিশ্বাস রাখাথেকেবিরত থাকতে হবে।প্রচলিত ভুল{চার}
একটি ভুল শব্দঃ অকাল মৃত্যু
কম বয়সেকারো মৃত্যু হলে অকাল মৃত্যু শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই প্রয়োগএড়িয়ে চলা কর্তব্য। কারণ প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ‘মৃত্যু’ যেমন অনিবার্যতেমনি তার দিন-ক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতেসামান্য এদিক-সেদিক হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وما كان لنفس ان تموت الا باذن الله كتابا موجلاতরজমা : আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারেনা। কেননা, তা সুনির্ধারিত।-সূরা আলইমরান : ১৪৫ আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, لو يواخذ الله الناس بظلمهم ما ترك عليها من دابة ولكن يوخرهم الى اجل مسمى فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمونতরজমা : আর যদি আল্লাহমানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনোপ্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন' তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকেঅবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারামুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।-সূরা নাহল : ৬১ আল্লাহ তাআলাআরো বলেন, قل فادرؤا عن انفسكم الموت ان كنتم صدقينতরজমা : আপনি বলে দিন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর।-সূরা আল ইমরান :১৬৮ হায়াত-মওতের মালিক আল্লাহ তাআলা এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকপ্রাণীর জীবনকাল আল্লাহ তাআলার নিকট সুনির্ধারিত। অতএব কেউ যদি মায়ের পেটথেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর মারা যায়, তবে এইটুকুই তার হায়াত। তদ্রূপ কেউ যদিপঁচিশ-ত্রিশ বছরের যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করে তবে এই পঁচিশ-ত্রিশ বছরই তারহায়াত। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যা তার জন্য নির্ধারিতকরেছেন। এমনিভাবে একশ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হওয়ার মানে এই নয় যে, সে তারজন্য নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। এটি অতি সহজ একটি কথা। সুতরাংকম বয়সে কারো মৃত্যু হলে সমবেদনা জানাব, মরহুমের মাগফিরাতের জন্য দুআ করব, বড় জোর বলব যে, তার তাকদীরে কত কম হায়াত লিখিত ছিল! কিন্তু এটাকে আবেগেরবশে অকাল মৃত্যু শব্দে ব্যক্ত করব না।প্রচলিত ভুল {পাঁচ}
হাত চুলকালে টাকা আসে!
কারো হাত বা হাতের তালু চুলকালে বলা হয় যে, তার হাতে টাকা বা অর্থ-কড়ি আসছে!বাস্তবেএটি একটি ভিত্তিহীন কথা। হাত বা হাতের তালু চুলকানোর সাথে টাকা-পয়সাআসা-যাওয়ার কোনোই সম্পর্ক নেই। অতএব এই ধরনের অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথাপরিহার করা উচিত।
প্রচলিত ভুল {ছয়}
একটি ভুল ধারণা: শাহজালাল রাহ. ও শাহজালালের মাযার কি এক বিষয়?
বর্তমানঅজ্ঞতার যুগে মানুষের বিচার-বিবেচনা এতই হ্রাস পেয়েছে যে, অশ্রুতপূর্বকথা-বার্তা এবং অভাবিতপূর্ব ধ্যান-ধারণা কর্ণগোচর হওয়া স্বাভাবিক হয়েদাঁড়িয়েছে। কবর ও মাযারের গর্হিত কার্যকলাপ এবং শিরক ও বিদআত সম্পর্কে যখনকাউকে সাবধান করা হয়, যেমন কবরে মেলা বসানো, ওরস করা, আলোকসজ্জা করা, ফুলদেওয়া, কবরের উপর ছাদ বা ইমারত নির্মাণ করা, কবরের তাওয়াফ করা, সেজদা করা, কবর কিংবা তার উপর নির্মিত দেয়াল বা ইমারতে হাত বুলানো বা চুম্বন করা, কবরওয়ালার নিকটে প্রার্থনা, মাযারের নামে মান্নত, মাযারের উদ্দেশে সফর, নারীদের মাযারে গমন, পর্দাহীনতা, পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা ইত্যাদি শিরক, বিদআত ও গর্হিত কার্যকলাপ সম্পর্কে যখন সাবধান করা হয় তখন কিছু মানুষ বোকারমতো বলতে থাকে যে, ভাই! এই সব কাজ তো শাহজালাল রাহ. এবং অমুক অমুকবুযুর্গের মাযারে হয়ে থাকে। তাহলে তা না-জায়েয কীভাবে হয়? এমনিভাবে অনেকেমাযারের গর্হিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করাকে বুযুর্গদের সঙ্গে বেআদবী বলেমনে করে! তাহলে কি তারা বুযুর্গের মাযারকেই বুযুর্গ মনে করে কিংবা মনে করেযে, মাযারে শায়িত বুযুর্গেরা এইসব মাযার ও মাযার-পুজার সূচনা করে গেছেন? অথবা মাযার-ব্যবসায়ী ভণ্ড এবং মাযার-পুজারী ভক্তদেরকেও বুযুর্গানে দ্বীনমনে করে?! শাহজালালের দরগায় গর্হিত কার্যকলাপে লিপ্ত লোকেরাও কি শাহজালাল?! একথা তো বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না যে, কোনো ব্যক্তি নিজের কবরকে মাযারেপরিণত করতে পারে না। কবরে শায়িত ব্যক্তি কীভাবে ওই কবরের উপর মাযার নির্মাণকরবে? অতএব বুযুর্গানে দ্বীনের কবরকে মাযারে পরিণত করা এবং তাতে বিভিন্নগর্হিত কর্মকাণ্ড আরম্ভ করা নিশ্চয়ই পরবর্তী কারো কাজ হবে। শাহজালালরাহ.-এর কবরে এইসব কাজ কারা শুরু করেছে? তাঁর কোনো শীষ্য, খলীফা, সুন্নতেরঅনুসারী কোনো বুযুর্গ? কক্ষনো না; বরং এসব তাঁর ইন্তেকালের বহু বছর পরএকশ্রেণীর মাযার-ব্যবসায়ী এবং সুফী-সাধনার নামে অবাধ যৌনতা ও উচ্ছৃঙ্খলতারপৃষ্ঠপোষক বিদআতী ও মুলহিদ গোষ্ঠীর উদ্ভাবন। এজন্য কেউ যদি এইসব গর্হিতকর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন এবং মাযারের পাণ্ডা ও দর্শনার্থীদের সম্পর্কে (যারা ভ্রান- উদ্দেশ্যে বা ভুল পন্থায় যিয়ারত করে থাকে) আপত্তি করেন তা হবেঈমানের দাবি পূরণ, যা মাযারে শায়িত ওইসব বুযুর্গরাও প্রচার করে গেছেন, তাকে বুযুর্গানে দ্বীনের মর্যাদা নষ্টকারী বা বিদ্বেষ পোষণকারী আখ্যা দেওয়াচরম মূর্খতা। তাঁরা বুযুর্গানে দ্বীনের অবমাননাকারী নয়; বরং তাঁদের ঈমানী ওকুরআনী শিক্ষারই ধারক-বাহক। অতএব সাবধান; মাযার ও মাযারে শায়িত বুযুর্গদেরএক মনে করবেন না। অন্যথায় আপনিই হবেন বুযুর্গানে দ্বীনের অবমাননাকারী।প্রচলিত ভুল {সাত}
আঠারো হাজার মাখলুকাত!
উপরের কথাটি লোকমুখে এতই প্রসিদ্ধ যে, অনেকের কাছে তা কুরআন-হাদীসের বাণীর মতো স্বতঃসিদ্ধ।কিন্তুমাখলুকাতের এই নির্দিষ্ট সংখ্যা না কুরআনে আছে, না কোনো সহীহ হাদীসে।বাস্তবতা হল, আল্লাহ তাআলা অগণিত মাখলুক পয়দা করেছেন। জলে ও স্থলে ছড়িয়েথাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাখলুক আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। মানুষের জানারবাইরেও রয়েছে অসংখ্য মাখলুক। আল্লাহ তাআলা কত ধরনের মাখলুক সৃষ্টি করেছেনতার নির্দিষ্ট সংখ্যা সহীহ হাদীসে বলা হয়নি। একটি ‘মুনকার’ বর্ণনায় এরসংখ্যা ‘এক হাজার’ বলা হয়েছে।কিন্তুঅনেক মুহাদ্দিস বর্ণনাটিকে মাওযূ বা জাল বলে আখ্যা দিয়েছেন। (আলমাওযূআত, ইবনুল জাওযী ২/২১৬; আলফাওয়াইদুল মাজমুআ পৃ. ৪৫৮-৪৫৯) এছাড়া এই সংখ্যাসম্পর্কেকিছু মনীষীর উক্তিও রয়েছে। যেমন মারওয়ান ইবনুল হাকামের কথামতে সতের হাজার জগত রয়েছে। আর আবুল আলিয়ার অনুমান অনুযায়ী চৌদ্দ হাজারকিংবা আঠারো হাজার মাখলুকাত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এই বিভিন্ন সংখ্যাকিছুমনীষীর উক্তিমাত্র, হাদীস নয়। দ্বিতীয়ত তাদের বক্তব্য থেকেও অনুমিত হয় যে, নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বোঝাতে নয়; বরং আধিক্য বোঝাতেই তারা এ সব কথাবলেছেন। তাও আবার অনুমান করে। এই কারণে এর কোনোটিকেই প্রমাণিত সত্য মনেকরার কোনো কারণ নেই; বরং এ বিষয়ে ইবনে কাসীর রাহ.-এর কথাটিই মূল কথা, যাতিনি আবুল আলিয়ার পূর্বোক্ত কথাটি পূর্ণভাবে উদ্ধৃত করার পর বলেছেন। আর তাহল, هذا كلام غريب يحتاج مثل هذا إلى دليل صحيحঅর্থাৎ এটি এমন একটি আজবকথা, যারজন্যবিশুদ্ধদলীলের প্রয়োজন রয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২৬) অতএব আঠারো হাজার নয়; বরং বলা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা অসংখ্য অগণিত মাখলুক পয়দা করেছেন, যা আমরাগুণে ও হিসাব করে শেষ করতে পারব না।প্রচলিত ভুল {আট}
একটি গর্হিত বিদআত ও মারাত্মক বিকৃতি : ইসলামে কি তৃতীয় কোনো ঈদ আছে!অনেকসময় সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির দিকে লক্ষ্য করে কিংবা কোনো বাস্তবতাবোঝানো কঠিন মনে হলে অনেকে চুপ থাকার পথ বেছে নেন। অথবা দু’একবার বলে চুপ হয়ে যান। এটা এ কারণে অনুচিত যে, এতে প্রকৃত বিষয় মানুষের অজানা থেকে যাবে এবং ভুল কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
ঈদ ইসলামের শাখাগত বিষয় নয়। এটি দ্বীনের ‘শিআর’ তথা প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত এবং এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের নির্ধারণ ও নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল
(أمر تعبدي وتوقيفي )।অর্থাৎ এটি শুধু বিবেকবুদ্ধি ও কিয়াস দ্বারা অনুধাবন করা যায় না। সরাসরিশরীয়তদাতার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আদেশ দ্বারাই বিধিত হয়। এজন্য সুন্নতেমুতাওয়ারাসা, স্পষ্ট হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে তৃতীয় ঈদ আবিষ্কারকরা বিদআতই হবে।
আরএখন তো বিষয়টি শুধু এই নয় যে, একটি বিদআতকে সুন্নতের চেয়েও বেশিগুরুত্বপূর্ণ মনে করে সম্মিলিতভাবে উদযাপন করা হচ্ছে; বরং এটিকে বানানোহয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববতের মাপকাঠি ওপ্রতীক। অথচ শরীয়ত বলে সুন্নাহর অনুসরণ, উসওয়ায়ে হাসানাহ অনুযায়ীজীবনযাপন, সুন্নতকে যিন্দা করা ও বিদআত নির্মূল করার মেহনত হচ্ছে মুহববতেরমাপকাঠি ও নিদর্শন।
সাদাচোখে এটি কারো কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও বাস্তবে তা একটি মারাত্মক চিন্তাগত বিকৃতি। আর এই নবআবিষ্কৃত ‘ঈদ’কে জশনে জুলুস আকারে পালন করতে গিয়ে যেসব গর্হিত কাজ, আচরণ ও ভিত্তিহীন বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয় সে বিষয় তো রইলই।
মনেরাখা উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হকসমূহ আদায় করাথেকে উদাসীন হয়ে অন্যায় পন্থায় হক আদায়ের বাহানার দ্বারা নিজেকেসান্ত্বনা দেওয়া নিজের প্রতি ও গোটা উম্মতের প্রতি মারাত্মক জুলুম। আল্লাহতাআলার নিকট দাবি নয়, আমল গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, অন্তরেরতাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। বিদআত নয়, শুধু সুন্নতই তাঁর নিকট বরণীয়।
একটু ভেবে দেখুন, যে নাসারাদের পথ থেকে আমরা সূরায়ে ফাতিহায় প্রতিদিন কমপক্ষে বিশবার আল্লাহ তাআলার নিকটولا الضالين বলে আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের থেকে নেওয়া রসম-রেওয়াজে কি উম্মতের কোনো কল্যাণ থাকতে পারে?
اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين
প্রচলিত ভুল {নয়}
প্রবল বৃষ্টি বন্ধের জন্য আযান!
গত সংখ্যার প্রচলিতভুলবিভাগে অনাবৃষ্টির দিনে বৃষ্টির অবতরণ কামনা করে প্রচলিতএকটিকু-সংস্কারের কথা লিখেছিলাম। সেদিন একজন লেখকেরএকটিলেখায়আরেকটি নতুন রসমের কথা পড়লাম। তবে তা বৃষ্টি অবতরণের জন্য নয়; বৃষ্টিবন্ধের জন্য। তিনি লিখেছেন , ‘বৃষ্টিপাত প্রবল থেকে প্রবলতর হয়, ... কেউকেউ ব্যাকুল হয়ে ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করে আযান দেওয়ার জন্য, যিনি বৃষ্টিদেন সেই আল্লাহ আযান শুনে হয়তবা অনুভব করবেন তাঁর বান্দার অসহায়ত্ব, রহমতকরবেন এবং ফিরিয়ে নেবেন বজ্র, বৃষ্টি, বাতাস।’ জানি না, বজ্র-বৃষ্টি ও ঝড়োবাতাসের সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ‘আযান দেওয়ার’ এই আমল
লেখকেরস্রেফ কল্পনা না বাস্তবেও কোনো এলাকায় এর প্রচলন রয়েছে। হয়তো বা দুর্ভোগথেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার চিন্তা থেকেই এই নতুন আমল।এখানে উল্লেখ্য, সুদিনে আল্লাহর শোকর আদায় করা, দুর্দিনে সবর করা এবং তাঁরদেয়া আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করা অবশ্যইপ্রশংসনীয়। তবে এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, এই শোকর, সবর ও আশ্রয় প্রার্থনারক্ষেত্রে একজন মুমিনকে প্রথমত ঐ আমলগুলিই করা উচিত, যা নবীজী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অনাবৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিদু’টোই বান্দার কষ্টের কারণ। এ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতেহবে। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাওয়ার সুন্দর নিয়ম যেমন ইসলামেরয়েছে তেমনি অতি বৃষ্টির ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেওয়ারসুন্দর শিক্ষাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকেদিয়েছেন। একজন মুমিনকে তাঁর শিক্ষা দেওয়া আমলের মাধ্যমেই আল্লাহর আশ্রয়কামনা করা উচিত। সহীহ হাদীসে এসেছে, একবার মদীনায় এক সপ্তাহ একাধারে প্রবলবৃষ্টিপাত হল। অবিরাম বৃষ্টির সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে সাহাবীগণ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর দরবারে দুআ করার জন্য অনুরোধকরেন। তখন নবীজী এভাবে দুআ করেন, اللهم حوالينا ولا علينا، الله على الآكام والظراب وبطون الأودية و منابت الأشجارনবীজীর দুআর ফলে মুহূর্তেমদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০১৪ এমনিভাবেঝড়-তুফানের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন, اللهم اني اسئلك خير ما آمرت به وأوعوذبك من شر ما آمرت بهআর বাতাস কমে বৃষ্টিনেমে এলে তাঁর চেহারা উজ্জ্বল দেখাত। তখন তিনি আল্লাহর ‘হামদ’ করতেন, বলতেন, এটি ‘রহমত’। আরও বলতেন, اللهم صيبا نافعا -ফাতহুল বারী ২/৬০৪, ৬০৮অতএব হাদীসে বর্ণিত এসব দুআ, এছাড়া অন্যান্য দুআ-ইস্তিগফার বা ‘সালাতুলহাজত’ পড়ে আল্লাহর কাছে এ সকল বালা-মুসিবত থেকে পানাহ চাওয়া উচিত। কিন্তুআযান তো ইসলামের অন্যতম শিআর। যার জায়গা ও ক্ষেত্রগুলো শরীয়ত কর্তৃকসুনির্ধারিত। তাই সেই নির্ধারিত জায়গাতেই এই আমল সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
প্রচলিত ভুল {দশ}
এটি হাদীস নয়: ‘মাদরাসা রাসূলের ঘর’!
কোনো কোনো ওয়াজমাহফিলে এই ধরনের কথা শোনা যায় যে, ‘মসজিদ আল্লাহর ঘর আর মাদরাসা রাসূলের ঘর।’ আবার কোনো কোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তা আরেকটু আগে বেড়ে এটাকে হাদীস হিসেবে এভাবেও বর্ণনা করেন যে,المسجدبيتاللهوالمدرسةبيتي
‘মসজিদ আল্লাহর ঘর আর মাদরাসা আমার ঘর।’
এখানে লক্ষণীয় যে, উপরোক্ত কথায় দু’টি বাক্য রয়েছে। প্রথম বাক্যটি হল, ‘মসজিদ আল্লাহর ঘর’। এটি কুরআন ও হাদীস দ্বারা সমর্থিত । প্রায় এর কাছাকাছি শব্দ বিভিন্ন হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তুদ্বিতীয় বাক্য অর্থাৎ‘মাদরাসা রাসূলের ঘর’ এটি কোনো হাদীস নয়। কেউ এটাকে হাদীস হিসেবে বললে ঠিক হবে না। তবে একথা বলাই বাহুল্য যে, ‘মাদরাসা’ যেখানে দ্বীনি তালীম-তরবিয়ত হয়, কুরআন-হাদীসের শিক্ষা দেওয়া হয়, আল্লাহ ও রাসূলের কথাআলোচনাহয়তা নিঃসন্দেহে মুবারক স্থান। এ সকল স্থান ফেরেশতারা ঘিরে রাখেন এবং সেখানেআল্লাহর রহমত ও সাকীনা নাযিল হয়। অতএব ঐসব ঘরও আল্লাহ ও রাসূলেরই ঘর। কিন' তাই বলে‘মাদরাসা রাসূলের ঘর’ বাক্যটিকেহাদীস হিসেবে বলার সুযোগ নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। আর মসজিদ-মাদরাসার মধ্যেএভাবে বিভাজনও অনুচিত।
প্রচলিত ভুল {এগার}
ইস্তেখারার জন্য কি ঘুমাতে হয়?কোনোকাজ করার ইরাদা করলে কিংবা অত্যাসন্ন কোনো বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনাকরতে তাঁরই দরবারে কায়মনোবাক্যে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রার্থনা করার নামইস্তেখারা। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাকরে যে, আমি যা করতে চাই তাতে যদি আমার কল্যাণ থাকে তাহলে তা আমার জন্য সহজকরে দিন এবং বরকত দান করুন। আর যদি তাতে কল্যাণ না থাকে তাহলে তা থেকেআমাকে বিরত রাখুন এবং যাতে আমার কল্যাণ তা-ই আমাকে দান করুন।এটিই হল ইস্তেখারার হাকীকত। ইস্তেখারার জন্য দুটি কাজ করণীয় বলে সহীহহাদীসেবলা হয়েছে। দু’ রাকাত নামায আদায় করা এবং ইস্তেখারার প্রসিদ্ধ মাসনূনদুআটি মনোযোগের সাথে পড়া। সময়ের স্বল্পতা বা অন্য কোনো কারণে এই দু’টি কাজসম্ভব না হলে তিনবার বা সাতবার এই দুআ পড়েও ইস্তেখারা করা যায়, اللهم خر لي واخترلي (ইবনুস সুন্নী, হাদীস : ৫৯৭, ৫৯৮) অতঃপর যে দিকে কলবের ইতমিনান হবে আল্লাহর উপর ভরসা করে সেই কাজআরম্ভ করবে। এভাবে আমল করলে ইস্তেখারা হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, এই আমল করারজন্য শরীয়তে নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। রাত বা দিনের যেকোনো সময় তা করা যায়।কিন্তু অনেকে মনে করে, ইস্তেখারার জন্য ঘুমাতে হয় কিংবা রাত্রি বেলায়ঘুমানোর আগেই শুধু ইস্তেখারা করা যায়। আবার অনেকে মনে করে, স্বপ্ন দেখলেইইস্তেখারা পূর্ণ হবে। আসলে এর কোনোটিই ইস্তেখারার জরুরি কোনো বিষয় নয়; বরংরাত-দিনের যে সময় নামায পড়া যায় তখনই দুই রাকাত নামায ও নির্দিষ্ট দুআটিপড়ে ইস্তেখারা করে নেওয়া যায়।
প্রচলিত ভুল {বার}
একটি আশ্চর্য অপবাদ: কাফের মারা গেলে কি ‘ফী নারি জাহান্নামা’ বলতে হয়?
একজনধর্ম-বিদ্বেষী ব্যক্তি সম্পর্কে শুনেছি যে, সে দ্বীনী মাদরাসা সম্পর্কেসমালোচনা করে লিখেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে শিশুদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়, কোনোবিধর্মীর মৃত্যুর সংবাদ পেলে ‘ফী নারি জাহান্নাম খালিদীনা ফীহা’ বলতে হয়!আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মিথ্যাচার ত্যাগ করার তাওফীক দান করুন। উপরোক্তবক্তব্য শরীয়ত ও দ্বীনী মাদরাসা উভয়ের সম্পর্কেই মিথ্যাচার। না মাদরাসায় এইশিক্ষা দেওয়া হয় আর না শরীয়তে কোথাও এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিজীবদ্দশায় কাফির হলেও তার মৃত্যু কোন হালতে হয়েছে তা তো গায়েবী বিষয়, যাএকমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। যাদের কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণের সংবাদশরীয়তের দলীল দ্বারা প্রমাণিত, তাদের বিষয় আলাদা। এছাড়া সাধারণভাবে কারোসম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, সে কাফের অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করেছে।অতএব তার মৃত্যুতে ‘ফী নারি জাহান্নামা’ কীভাবে বলা যায়? উপরন্তু কাফেরঅবস্থায় মারা গেলেও এই বাক্য পড়তে হয়-এই বিধান কোথায় আছে? কারো সম্পর্কেকিছু বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা শুধু শরীয়তেরই বিধান নয়, সভ্যতা ওশরাফতেরও অপরিহার্য দাবি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই শরাফত দান করুন। আমীন।প্রচলিত ভুল {তের}
একটি ভুল দরূদ : দরূদে হাজারী সঠিক দরূদ নয়অযিফারঅনির্ভরযোগ্য কোনো কোনো পুস্তিকায় বা পৃথক আকারে প্রকাশিত লিফলেটে দরূদেহাজারী নামের একটি দরূদ কোনো কোনো হলকায় প্রচার করা হয়। এই দরূদ কোনোসহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়নি এবং তা কোনো আল্লাহওয়ালা বুযুর্গেরও রচিত দরূদনয়। এতে না আছে দরূদের নূর, না আছে সাহিত্যের মাধুর্য। বরং এর ভাষায়রয়েছে অসৌজন্যতা। তাই এই দরূদ পাঠ থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর এটিকেকুরআন-হাদীসের মাছুর দরূদ মনে করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
প্রচলিত ভুল {চৌদ্দ}
কুরবানীর শরীক সংখ্যা কি বেজোড় হওয়া জরুরি?
কিছুলোককে বলতে শোনা গেছে, যে পশুতে সাতজন শরীক হতে পারে তাতে শরীকের সংখ্যাবেজোড় হওয়া জরুরি। সুতরাং একটি গরুতে এক, তিন, পাঁচ বা সাতজন শরীক হতেপারবে। দুই, চার বা ছয়জন শরীক হতে পারবে না।
এটাবিলকুল গলত কথা। একটি গরু যেমন এক ব্যক্তি একা কুরবানী করতে পারে তেমনিদুই থেকে সাত পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যক শরীক একত্র হয়েও কুরবানী করতে পারে।এতে কোনো বাধা নেই। তেমনি শরীকের সংখ্যা জোড় না হয়ে বেজোড় হওয়ার মাঝেওএমন আলাদা কোনো ফযীলত নেই, যার কারণে পাঁচ শরীকের স্থলে ছয় শরীক বা ছয়শরীকের স্থলে সাত শরীক একত্র হয়ে কুরবানী করতে উৎসাহ দেওয়া যায়।
প্রচলিত ভুল {পনের}
জুমআর রাত কি কদরের রাত থেকেও উত্তম!
‘শবে জুমআ শবে কদর থেকেও উত্তম। কেননা শবে জুমআয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে আগমন করেছিলেন’’এটি হাদীস কিনা-এই প্রশ্ন বার বার করা হয়।এই রেওয়ায়েতটি কোথায় পড়েছেন বা কার কাছে শোনেছেন-জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ কেউএকটিকিতাবেরকথা বলেছেন। বললাম, সেখানে কি এর কোনো হাওয়ালা আছে? তারা দেখে বললেন, মুসনাদে আহমদের হাওয়ালা দেওয়া হয়েছে। মূল কিতাব খুলে দেখা গেল, সেখানেএই বিষয়টিকে হাদীস হিসেবে উল্লেখই করা হয়নি। বরং ‘আশিআতুল লামাআত’ (মিশকাতের ফার্সী শরহ)-এর উদ্ধৃতিতে ইমাম আহমদের বরাতে এই উক্তি উল্লেখকরা হয়েছে যে, কয়েকটি কারণে জুমআর রাত কদরের রাত থেকেও উত্তম। কেননাজুমআর রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আমিনার গর্ভেআগমন করেন।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কোথাকার বিষয় কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। ইমাম আহমদের নাম দেখেই মুসনাদে আহমদের উদ্ধৃতি অবতারণা করা হয়েছে। আবারএকটিউক্তিকেহাদীস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে!! অথচ এ বিষয়টিও তাহকীক করা প্রয়োজন ছিলযে, ইমাম আহমদ থেকে কথাটি প্রমাণিত কি না? আর এ রাতেই রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে আগমন করেছিলেন-এ কথারও সনদখোঁজার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া এটি প্রমাণিত হলেও এটা কীভাবে আবশ্যক হয় যে, এ কারণে রাতটি কদরের রাত থেকে উত্তম? ‘আশিআআতুল লামাআত’ গ্রন্থে এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর নেই, অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবেও নেই।
সারকথা এই যে, উপরোক্ত উক্তিটি হাদীস নয় এবং এটি অন্য কোনো দলিল দ্বারাও প্রমাণিত নয়।
উপরেরঘটনা থেকে এই বাস্তবতা আবারো ফুটে উঠল যে, শুধু অনুবাদসর্বস্ব জ্ঞান খুবইভয়ঙ্কর। যারা শুধু অনুবাদের উপর নির্ভর করে কোনো আরবী কিতাবের জ্ঞান লাভকরেন, মূল কিতাব থেকে সরাসরি জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও আবশ্যকীয়ইলম যাদের নেই-তারা অনুবাদের সহায়তায় যতটুকু অর্জন করেন তা ঝুঁকিপূর্ণ। এপন্থায় অর্জিত জ্ঞান যেমন তাদেরকে গবেষণার যোগ্য প্রমাণ করে না তেমনিএটাকে পুঁজি করে কোনো আহলে ইলমের সাথে ইলমী আলোচনা ও পর্যালোচনার অধিকারওসৃষ্টি হয় না।
হায়! আমাদের বন্ধুরা যদি এই বাস্তবতাটুকু অনুভব করতেন তাহলে সমাজের অনেক বিবাদ দূর হয়ে যেত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রচলিত ভুল {ষোল}
দুটি প্রচলন ভুল১. মুসাফাহার সময় ঝুঁকা
সাক্ষাতের সময় নিজ মুসলিম ভাইকে সালাম করা তো সুন্নতে মুয়াক্কাদাহওইসলামের শিআর। আগে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা, পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া, শুদ্ধওপরিষ্কার উচ্চারণে সালাম বলা-কমপক্ষে ‘আসসালামু আলাইকুম’ পর্যন্ত অবশ্যই বলা-সুন্নত।
সালামেরপর আরেকটি আমল হল মুসাফাহা, যা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল। তবে সালামের মতোমুসাফাহার আদেশ এতটা তাকিদপূর্ণ নয় যে, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সাথেমুসাফাহা করতে হবে। আর আজকাল তো মুসাফাহার আদবের আলোচনাওকম হয় এবং এসবের প্রতি লক্ষ্যওকম করা হয়। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিলে এ বিষয়ে আলাদা প্রবন্ধ প্রকাশের ইচ্ছা আছে।
মুসাফাহার আদব রক্ষা না করার কারণে অনেক সময় মানুষের কষ্ট হয়। এটা নাজায়েয।
এইমুহূর্তে যে রসম সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই তা এই যে, অনেককে দেখা যায়কোনো বুযুর্গ বা বড় ব্যক্তির সাথে মুসাফাহা করার সময় কিছুটা ঝুঁকে যান।অথচ কারো সম্মানার্থে মাথা বা ঘাড় ঝুঁকানোর অনুমতি নেই। ‘কোনো ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত হলে কি মুসাফাহা করব’-এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লামইরশাদ করেন, হ্যাঁ, মুসাফাহা কর। এরপর জিজ্ঞাসা করা হল, তার সামনে কিঝুঁকতে পারি? ইরশাদ করলেন, না। ঝুঁকা যাবে না। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭০৩
২. মুসাফাহার পর বুকে হাত লাগানো
অনেক ভাইকে দেখা যায়, মুসাফাহার পর বিশেষ করে কোনো বুযুর্গের সাথে
মুসাফাহারপর ডান হাত নিজের বুকে মুছে নেন। কী নিয়তে এমনটি করেন-তা আমার জানানেই। সম্ভবত এই নিয়ত হতে পারে যে, মুসাফাহার দ্বারা যে বরকত হল তা নিজশরীরে মুছে নেওয়া।
এই প্রচলনের যেমন কোনো ভিত্তি নেই তেমনি এই নিয়তেরও। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা এজন্য জরুরি যে, ধীরে ধীরে তা রসম-রেওয়াজে পরিণত হয়ে যায়। এ নিয়ে পরস্পর দ্বন্দ্বওসৃষ্টি হয়। এমনকি মূর্খতাপ্রসূত এই রেওয়াজ একপর্যায়েবিদআতপর্যন্ত পৌঁছে যায়। অন্যথায় কেউ যদি এমনিতেই বুকে নিজের হাত মুছে নেয় তাহলে এতে ক্ষতির কী আছে!
প্রচলিত ভুল {সতের}
ফাতেহায়ে ইয়াজদহম পালন!রবিউস সানীর এগার তারিখে অনেককে ফাতেহায়ে ইয়াজদহম (এগার তারিখের ফাতেহা) বা শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর ওফাত দিবসপালন করতে দেখা যায়। এ উপলক্ষে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয় এবং মাহফিল-মজলিসের আয়োজন করা হয়।
এটা একটা কু-রসম। ইসলামী শরীয়তে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসপালনের নিয়ম নেই। নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাঁদের কারোরই জন্মদিবস-মৃত্যুদিবসপালন করার কথা শরীয়তে নেই। তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবসপালন করতে হলে তো বছরের প্রতিদিনইপালন করতে হবে। অথচ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম তো সকল ওলি-বুযুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের জন্মদিবসপালন করেননি বা অনুসারীদেরকে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসপালনের আদেশ করেননি। পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে।
ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে তারিখে‘ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম’পালন করা হয় অর্থাৎ এগার রবিউস সানী তা ঐতিহাসিকভাবে শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মৃত্যুদিবস হিসেবে প্রমাণিতও নয়।
কারণ তাঁর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
তাঁর জীবনীগ্রন্থ‘তাফরীহুল খাতির ফী মানাকিবিশ শায়খ আবদুল কাদির’-এএ সম্পর্কে কয়েকটি মত উল্লেখ করা হয়েছে : রবিউস সানীর নয় তারিখ, দশ তারিখ, সতের তারিখ, আঠার তারিখ, তের তারিখ, সাত তারিখ ও এগার তারিখ। আবার কারোকারো মতে রবিউল আউয়ালের দশ তারিখ। এই আটটি মত উল্লেখ করার পর গ্রন্থকার দশইরবিউস সানীকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (দেখুন : ফাতাওয়া রহীমিয়া ২/৭৬-৭৭)
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা হাফেয যাহাবী রাহ. (৭৪৮ হি.)ও বলেছেন-
توفي في عاشر ربيع الآخر سنة إحدى وستين، وله تسعون سنة
‘তিনি নববই বছর বয়সে ৫৬১ হিজরীর রবিউস সানীর দশ তারিখে ইন্তেকাল করেন।’ (তারীখুল ইসলাম ২৯/৬০)
এছাড়া ইতিহাস ও আসমাউর রিজালের অন্যান্য কিতাবেও আট, নয় ও দশ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগার তারিখ নয়।
আর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও‘মৃত্যুদিবস’পালনকরা শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়; বরং বছরের যেকোনো দিন নেককার বুযুর্গদেরজীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাঁদের জন্য ঈসালে ছওয়াব করা যায়। তা না করেনির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েয-নাজায়েয বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবসউৎযাপন করা রসম ও বিদআত ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ধরনের বিদআত ও রসমপালনেরমাধ্যমে খোদ শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রাহ.-এর মতো বুযুর্গ ওলিদের অবমাননাইকরা হয়। আর আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টিসহ বিদআতের অন্যান্য শাস্তি তোরয়েছেই।
প্রচলিত ভুল {আঠার}
সুরমা কি তুর এর তাজাল্লী থেকে সৃষ্টি?
সুরমারবিষয়ে কোনো কোনো লোককে বলতে শোনা যায় যে, হযরত মুসা আ. যখন তুর পাহাড়েআল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছিলেন তখন আল্লাহর তাজাল্লীতে পাহাড় ভস্মহয়ে গিয়েছিল। সেই ভস্মিভূত পাহাড় থেকেই সুরমার উৎপত্তি ও ব্যবহার।এটাসম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সুরমা একটি খণিজ দ্রব্য। এর সাথে তুর পাহাড়ের কোনোসম্পর্ক নেই। মুসা আ.-এর আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা ও তুর পাহাড়ের মূল ঘটনাটিসত্য। কুরআন মজীদে এর পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। (সূরা আ‘রাফ : ১৪৩ দ্রষ্টব্য)কিন্তু কোথাও এই ঘটনার সাথে সুরমাকে জড়িয়ে দেওয়ার কথাটির সামান্যতমও উল্লেখ নেই। অতএব এই ধরনের কথা পরিহার করা জরুরি।
প্রচলিত ভুল {উনিশ}
নামাযে কয়েকটি ভুল
নামাযে মনে মনে কুরআন পড়া
যেসমস্ত নামাযে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সে সকল নামাযে অনেককে দেখা যায়, মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সূরা কেরাত পড়েন। হয়তো তারা এই ভুল ধারণা করেআছেন যে, আস্তে আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া।
এটিঠিক নয়। কারণ যে সকল নামাযে কেরাত আস্তে পড়তে বলা হয়েছে, তার অর্থ হল, নিচু স্বরে তিলাওয়াত করা। আর এতো খুবই সহজ কথা যে, মনে মনে পড়াকোনোক্রমেই নিচু স্বরে পড়া নয়।
ফিকহ-ফাতাওয়ারকিতাবাদি থেকেও বোঝা যায় যে, আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলএমনভাবে পড়া, যেন সে নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যইজরুরি যে, সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া দেখাযাবে। একটি হাদীসে আছে যে, যোহর ও আসর নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়েকেরামও কখনো কখনো শুনতে পেতেন। হযরত আবু মামার বলেন, আমরা হযরত খাববাবরা.কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ওআসর নামাযে কুরআন পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারাকীভাবে বুঝতেন? তিনি বললেন, ‘বিজতিরাবি লিহয়াতিহী’-তাঁর দাঁড়ি মোবারকনড়াচড়া দ্বারা। (সহীহ বুখারী-ফাতহুল বারী ২/২৮৪-২৮৭)
অতএবকেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবেহরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবেনা।
তাকবীরে তাহরীমা মনে মনে বলা
এটি আরেকটি ভুল। ইমামের পিছনে নামায পড়ার সময় এই ভুলটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। কান পর্যন্তহাতউঠিয়েবাঁধাকেই অনেকে যথেষ্ট মনে করে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, নামাযের শুরুতেতিনটি কাজ করতে হয়। প্রথমে মনে মনে কোন নামায পড়ছি-এর সংকল্প করতে হবে।এর নাম নিয়ত, যা নামায সহীহ হওয়ার জন্য জরুরি। উল্লেখ্য, মনে মনে সংকল্পকরে নিলেই নিয়ত হয়ে যাবে, মুখে উচ্চারণ করতে হবে না।
দ্বিতীয়কাজটি হল, তাকবীরে তাহরীমা। অর্থাৎ স্পষ্ট উচ্চারণে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।যেহেতু এই তাকবীরের মাধ্যমে নামায বহির্ভূত সকল কাজ হারাম হয়ে যায় তাইএকে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলে। এই তাকবীর বলা ফরয। যা স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণকরতে হবে।
তৃতীয় কাজ হল, কান পর্যন্ত দুইহাতউঠিয়ে ডানহাতদিয়ে বামহাতধরে নাভির নিচে বাঁধা। এই কাজটি সুন্নত।
প্রচলিত পরিভাষায় ‘নামাযের নিয়ত বাঁধা’ এই তিন আমলের সমষ্টিকেই বোঝায়।
এখন কেউ যদি শুধুহাতউঠিয়েতা বেঁধে নিল কিন্তু আল্লাহু আকবার বলল না বা মনে মনে বলল তাহলে নামাযেরপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবটিই আদায় হয়নি। ফলে তার নামায আদায় হবে না।
অতএব এখানেও তাকবীর স্পষ্টভাবে মুখে উচ্চারণ করা অপরিহার্য। শুধু মনে মনে বলা যথেষ্ট নয়।
প্রচলিত ভুল {বিশ}
দিনের প্রথম উপার্জনকে ভক্তি বা শ্রদ্ধা জানানো
সকালবেলা অনেক সময় দেখা যায় যে-রিকশা,সিএনজি,বাস-ট্রাক চালকরা বা দোকানদাররা দিনের প্রথম উপার্জনক হাতে পাওয়ার পর তাতে ভক্তি ভরে চুমো খায়। গাড়ির স্টিয়ারিং,হাতল বা অন্য কোনো অংশে ছোঁয়ানোর পরে বুকে ও চোখে লাগায়।অনেককে তো কপালে ঠেকাতে পর্যন্তও দেখা যায়।তেমনি কোনো কোনো ব্যবসায়ীও দিনের প্রথম উপার্জনকে এভাবে ভক্তি জানিয়ে থাকে।নিজের কষ্টার্জিত অর্থের উপর মানুষের মুহাব্বাত থাকা স্বাভাবিক।ইসলামে এই মায়া বা মুহাব্বত থাকা দোষণীয় কিছু নয়,কিন্তু উপরোক্ত ছোঁয়াছুয়ি ও কপালে ঠেকানোর মতো ভক্তিমূলক আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রথম উপার্জনকে ভক্তি জানালে পরবর্তী উপার্জনের পথ সুগম হবে-এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিওিহীন।
এসব আচরনের সবচেয়ে নিন্দিত দিক হল,উপার্জনের মাধ্যমকে অর্থাৎ গাড়ি, পণ্য বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে উপার্জনদাতা মনে করা।এমনকি কারো কারো কথাবার্তা থেকে তো পৌওলিকতারও আভাস পাওয়া যায়।
বাস্তব কথা এইযে, এই মাধ্যমগুলো উপলক্ষ মাত্র। তাই সবকিছু ঠিক থাকার পরও সবার উপার্জন ও সব সময়ের উপার্জন সমান হয়না। উপার্জন ও রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে।তিনি কখন কাকে কিভাবে রিজিক দিবেন এবং কোন উপায়ে দিবেন তা একমাত্র তিনিই জনেন।মনুষের কাজ হল হালাল উপার্জনের চেষ্টায় আল্লাহর দেওয়া মেধা ও শক্তি ব্যবহার করা এবং তাঁর কাছে রিজিক প্রার্থনা করা। অত:পর তিনি দয়া করে বান্দাকে যা কিছু দান করেন তার উপর সন্তষ্ট থাকা ও তাঁর শোকর গোযারী করা। সর্বোপরি এই অটল বিশ্বাস রাখা যে, উপার্জন আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। আর নেয়ামতের শোকর আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তা বাড়িয়ে দেন। উপার্জন হাতে আসার পর এটাই হল একজন মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু তা না করে উপার্জনের মাধ্যম এবং উপার্জিত অর্থ-কড়িকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মাথায় ও কপালে ঠেকানো সম্পূর্ণ অর্থহীন ও বিদআতীমূলক আচরণ।এর সাথে যদি কোনো ভ্রান্ত বিশ্বাস যুক্ত হয় তাহলে তা যে একটি চরম গর্হিত কজে পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সুতরাং একজন মুসলমান হিসেবে এধরণের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা ও অন্যকে একাজ থেকে বিরত রাখা ঈমানী দায়িত্বও বটে।সৌজন্যে: www.alkawsar.com
1 মন্তব্য(গুলি):
Namaze prothom rakate sura falaq pore ditiyo rakate jodi sura ikhlas pora hoy, setaki boidho? Naki sura por por porte hobe
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন